করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ, বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ, বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এই সময়ে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে দাড়িয়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হচ্ছে মৃত্যুও। শিশুরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতার অভাবেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
মহামারী করোনার সাথে যুদ্ধ শেষ না হতেই পুরোনো এক ভাইরাস নতুন রূপে ফিরেছে এই শহরে। করোনার মধ্যে আরও বিপজ্জনক হয়ে আসছে ডেঙ্গু। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ রোগের তুলনায় যেটিকে শিশুর জন্য বেশি ঝুঁকি। রোববার সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে রাজধানীতেই সবচেয়ে বেশি।
মগবাজার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুর অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, ডেঙ্গু সবকিছু তছনছ করে দিল। রাজধানীর উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুলের মনিটরিং অফিসার মোসলেহ উদ্দিন তরুণ জানান, এডিস মশবাহিত এই রোগে মাসখানেক আগে তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও অনাগত সন্তানকে হারিয়েছেন।
গত ১৪ জুন হঠাৎ জ্বর আসে তরুণের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের, ১৬ জুন রিপোর্টে ধরা পড়ে ডেঙ্গু, ততক্ষণে রক্তে প্লেইটলেটস নেমে আসে ১৮ হাজারে। এরপর আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। প্লেইটলেটস দেওয়ার পরও অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
তার সন্তান ২০ জুন পেটেই মারা যায়। ২৬ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি ফাতেমাকে। তরুণ মনে করেন, তাদের শান্তিনগরের বাসার পাশের ময়লার স্তূপের পাশে জমা পানি থেকেই এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আমার শিক্ষার্থী বাচ্চাটাও আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ৬ দিনে আমার সংসারটা লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার থাকলে, নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটালে হয়ত আমাকে সব হারাতে হত না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। এবারের ডেঙ্গুর ধরণটা ভিন্ন। আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে মুমূর্ষ অবস্থা শিশুদের। আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনার পাশাপাশি আরো কঠোর হতে হবে সরকারকে।
তারা বলছেন, শেষ পর্যায়ে রোগী আসায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়ায় ডেঙ্গু রোগীদের বেশি ভুগতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণেও জ্বর যেমন হয়, ডেঙ্গুতেও তাই হয়। করোনাভাইরাস আর ডেঙ্গির জোড়া প্রকোপে ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশার বংশবিস্তার থামাতে জোর দিতে বলছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব হাসপাতালে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকায় ১৬৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৬৭৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ৪টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে আইইডিসিআরে।
বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩৭২ জন রোগী হাসপাতালগুলো চিকিৎসা নিয়েছেন। যেখানে জুলাই মাসেই হাসপাতালে এসেছেন ২ হাজার ৯০ জন ডেঙ্গি রোগী। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।
সে বছর আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ালেও ২০২০ সালে ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটা কম ছিল। গত বছর ১ হাজার ৪০৫ জন রোগী হাসপাতালে ডেঙ্গির চিকিৎসা নেন। চলতি মাসেই ডেঙ্গিতে এর চেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের উপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।